স্ত্রীশিক্ষার জন্য সরকার নামমাত্র টাকা খরচ করেছে, II NIVEDITA AND SOME OF HER PUPILS
![]() |
| NIVEDITA AND SOME OF HER PUPILS |
স্ত্রীশিক্ষার জন্য সরকার নামমাত্র টাকা খরচ করেছে, NIVEDITA AND SOME OF HER PUPILS
এই পত্রটি নিবেদিতা লিখেছেন শ্রীমতী অ্যালবার্টা স্টার্জেসকে , যিনি মিস ম্যাক্লাউডের বোনঝি এবং মিসেস বেটি লেগেটের প্রথম পক্ষের সন্তান । তিনি স্বামীজির একান্ত স্নেহভাজন ছিলেন আর স্বামীজির সব কাজে তাঁর বিশ্বাস ছিল। এর ফলে নিবেদিতার সঙ্গেও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এখানে স্পষ্ট হয়েছে যে - নিবেদিতা অ্যালবার্টার কাছে তাঁর বালিকা বিদ্যালয়টির জন্য অর্থের প্রত্যাশা করে ছিলেন। এও এই চিঠিতে জানতে পারি - নিবেদিতা কত গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন - মেয়েদের জন্য প্রকৃত শিক্ষা কি হতে পারে।
' সিমরিক ' জাহাজ
২৭শে সেপ্টেম্বর , ১৯০৮
" প্রিয় অ্যালবার্টা ,
তোমার চিঠিটা আজ সকালে কুইন্স টাউনে এসেছে। আমি খুব আনন্দিত হয়েছি আর উত্তর দিচ্ছি। কেন যে স্কুল করা দরকার - এটা বুঝতে না পারাটাই প্রধান সমস্যা - আমি সেটা ধরতে পারিনি ; তুমি এত খোলাখুলি জানিয়েছ বলে ধন্যবাদ । আমি তোমাকে সুস্পষ্ট উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রাচ্যদেশের সঙ্গে পরিচিত সবাই জানে , বর্তমানে আর আগামী বহু বছর ধরেই এদের প্রধান সমস্যা হল - স্ত্রীশিক্ষা । এমন কি সরকার পক্ষও এখানে তাই স্বীকার করে। ... একদিকে প্রাচ্য
প্রতিদিন আধুনিক চিন্তায় ভাবিত হচ্ছে , সেখানে মেয়েরা তাতে একেবারেই অংশ নিতে পারছে না। এর ফলে নারী -পুরুষ দুটি ভিন্ন জগতে বাস করছে ; সহযোগিতার পরিবর্তে তারা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিহীন , বিরুদ্ধ মনোভাবাপন্ন । সুতরাং তুমি অনুমান করতে পার - একে অপরকে অপরিহার্য মনে করতেও এরা অপারগ। তার ফলে বুঝতেই পারছ - জায়া আর জননীর প্রেরণা আর প্রভাব ক্রমশ সীমিত হয়ে যাচ্ছে। সুস্থ সমাজের উচিৎ ছিল নারীর উজ্জ্বল , বীরত্বের গুনগুলিকে তুলে ধরা। তার পরিবর্তে যুগের পর যুগ ধরে নারীর অজ্ঞতা আর ভীরুতাকে বেশি বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। এইরূপে সমাজের নৈতিক আর বুদ্ধির অবক্ষয় অনিবার্য। একমাত্র সমাধান হল - পুরুষ ও মেয়েরা পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতার দ্বারা তাদের সামনে মহৎ , উদার নতুন জীবনের আদর্শকে তুলে ধরবে ; এইখানেই নারী-শিক্ষার প্রয়োজন।
... নানা বিভাগে বিভক্ত এবং বিভিন্ন প্রাদেশিক শাসনের অধীন এই ভারতবর্ষে সামগ্রিকভাবে স্ত্রীশিক্ষার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন। একটি জেলা বা একটি প্রদেশ সম্বন্ধে অনেকেই হয়তো অনেক কিছু জানে, কিন্তু এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত একটা সর্বভারতীয় ধারণা করতে পারেনা।
... স্ত্রীশিক্ষার জন্য সরকার নামমাত্র টাকা খরচ করেছে,
আমার ধারণা মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বেশ কিছু করার চেষ্টা করেছিল। আসলে , ভারতীয় মেয়েদের আধুনিক শিক্ষা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মিশনারি স্কুলগুলির উপরেই নির্ভরশীল।
যাই হোক , বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষার ফল কল্যাণপ্রদ না হয়ে মারাত্মক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
... আসল কথা হল - শিক্ষা একটা বিকাশ , যা ভিতর থেকেই হওয়া উচিৎ। শিক্ষার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র শিক্ষার্থীর অন্তরের ইচ্ছা আর সংগ্রামের দরকার হয়। যারা শিক্ষাকে একটা বিজ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করে না , তারাই অন্যরকম চিন্তা করে। কিন্তু আমরা জানি নিজেদের প্রচেষ্টাই এগিয়ে নিয়ে যায়। বাইরে থেকে জগতের যাবতীয় শিক্ষাকে হাতুড়ি ঠুকে ঢোকানোর চেষ্টাটা বৃথা, সেটা এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাকে নষ্ট করে।শিক্ষাকে অবশ্যই অন্তর থেকে আসতে হবে।
......ভারতীয় পুরুষেরা কিছু বিশিষ্ট ইংরেজকে ভালোবেসে আধুনিক ইংরাজি পড়তে আগ্রহী ; কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে যেন - নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি , জীবনের রুচিবোধ, আকাঙ্ক্ষা , আদর্শবোধ , ধ্যানধারণা প্রভৃতি মানসিক দিকগুলি ছাড়িয়ে যায়। এইটুকুই দাবী করছি। আমরা এমনভাবে নিজেদের প্রস্তুত করেছি যাতে ভারতবাসী আমাদের সামাজিক জীবনের অঙ্গ বলে গ্রহণ করে। প্রথমে তাদের আপনজন বলে গৃহীত হয়েছি , পরে তাদের এমনভাবে প্রস্তুত করছি - যাতে তারা নিজেদের চেষ্টায় জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
... ভারতীয় সবকিছুকেই শ্রদ্ধা করে , ভারতীয় ধরণে সেটিকে সুন্দর করে প্রকাশ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করি আমি। আমরা ধর্মশিক্ষা দিই না। এটা বিশ্বাস করি, সেই শিক্ষা তার নিজের গৃহেই পাবে। তাদের পরিচিত আদর্শগুলো খোলা মনে আলোচনা করি , আর অপরিচিত বিষয়গুলো এড়িয়ে চলি।
এইভাবে আমরা বালিকা বিদ্যালয়ের একটি ভাবাদর্শ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছি , যাতে মনে হয় ভারতীয় মেয়েদের শিক্ষা একজন ভারতীয় নারীর দ্বারাই সাধিত হচ্ছে , যা ছাত্রীর সমাজজীবনকে বিচ্ছিন্ন বা ধ্বংস না করে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সহজ শোনালেও ব্যবস্থাটা সম্পূর্ণ নতুন , ইতিমধ্যে অনেকেই এর অনুকরণ করছেন। এটিকে নানা দিক দিয়ে এমনভাবে উন্নত করতে চাইব যাতে আমাদের ধারণা অনুযায়ী স্কুলের যে দক্ষতা আর মান হওয়া উচিৎ তার কাছাকাছি পৌঁছতে পারি। কয়েক বছর এগিয়ে পরিকল্পনা করব যাতে যতটুকু সংস্থান আছে তার যথার্থ প্রয়োগ করা যায় ; আর তার জন্যই আমরা অর্থসাহায্য চাইছি।
এই লম্বা চিঠিখানা পড়তে নিশ্চয়ই তোমার অনেক ধৈর্যের দরকার হয়েছে , তার জন্য তোমায় ধন্যবাদ জানাই।
- তোমার মার্গট।"

No comments